Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আধুনিক উপায়ে কলা চাষ

কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। কলাকে প্রাচীন সাহিত্যে কদলি বলা হতো।

কলাগাছ, কলাপাতা, কলাগাছের শিকড় ও কলা সবই উপকারী। কলাগাছ ও কলাপাতা শুধুমাত্র পশু খাদ্য নয়। এদের আছে আশ্চার্যজনক ভেষজ গুণ। রোগ নিরাময়ে অদ্বিতীয়।

কলার পুষ্টিগুণ প্রচুর। কলা উপাদেয় খাদ্য। কাঁচা পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়। কলায় রয়েছে জলীয় অংশ ৭০ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, খাদ্য শক্তি (কিলোক্যালরি) ১০৯, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৮ গ্রাম, শর্করা ২৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১.০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২৪ মিলিগ্রাম। নারিকেল ছাড়া আর কোনো খাদ্যেই কলার মতো খাদ্যশক্তি নেই। তাই যে কোনো সময় পরিশ্রান্তে অথবা শক্তিক্ষয়জনিত অবস্থায় কলা আহার করলে শরীর পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। নারিকেলে ৩৫.৫৭ গ্রাম চর্বি থাকে। যদিও নারিকেলের শর্করা মাত্র ১০.২২ গ্রাম। নারিকেলে খাদ্য শক্তি ৩৭৬ কিলোক্যালরি। যা প্রচলিত ফলের মধ্যে সর্বোচ্চ। দৈনিক খাদ্য তালিকায় সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের খাবারে অন্তত ৬০ গ্রাম ফলাদি থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে খাবারে আপনার পছন্দের যে কোনো কলা থাকতে পারে।

 

কলা চাষ : বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বীচিকলা অন্যতম।

 

মাটি : পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।

 

চারা রোপণ : কলার চারা বছরে ৩ সময়ে রোপণ করা যায়। ১ম রোপণ কাল : আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। ২য় রোপণ কাল : মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। ৩য় রোপণ কাল : চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়।

 

চারার দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার।

 

গর্ত তৈরি : চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬০ সেমি. চওড়া ও ৬০ সেমি. গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।

 

চারা রোপণ : রোপণের জন্য অসি তেউড় উত্তম। অসি তেউরের পাতা সরু, সুঁচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কা- ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

 

সার ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি

অর্ধেক গোবর জমি তৈরির সময় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক গর্তে দিতে হবে। অর্ধেক টিএসপি একই সঙ্গে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া, অর্ধেক এমপি ও বাকি টিএসপি জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পর গাছ প্রতি বাকি অর্ধেক এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। মোচা বের হওয়ার সময় অবশিষ্ট ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

 

কলা গাছের পরিচর্যা : চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দেয়া উচিত। এছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দেয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য নালা থাকা আব্যশক। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেয়া ভালো।

 

রোগ ও প্রতিকার : কলা গাছের প্রধানতম রোগগুলো হচ্ছে পানামা, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা ও কলার দাগ রোগ।

পানামা রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের তেউড় হিসেবে চারা ব্যবহার করা যাবে না।

বানচিটপ ভাইরাস রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছ উঠানো আগে জীবাণু বহনকারী ‘জাব পোকা’ ও ‘থ্রিপস’ কীটনাশক ওষুধ দ্বারা দমন করতে হবে। সুস্থ গাছেও কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

সিগাটোকা রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি লিটার টিল্ট ২৫০ ইসি ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে।

বিটল পোকার আক্রমণে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মতো দাগ হতে দেখলে কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে মোড়ে দিতে হবে। এছাড়াও অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। যে কোনো ধরনের রোগের প্রতিকারের জন্য রোগ আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না।

ফসল সংগ্রহ : কলার চারা রোপণের ১১-১৫ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলা পাকার উপযুক্ত হয়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন কলার ফলন পাওয়া যাবে।

কলা ও কলা পাতার ভেষজ গুণ

ক. রোগ নিরাময়ে কলার ব্যবহার

১. শুষ্ক কাশিতে : একটি পাকা কলা চটকে অল্প পানিতে মিশিয়ে হালকা গরম করে সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা সকাল ও বিকালে কয়েক দিন খেলে উপশম হবে। তবে প্রতিদিন নতুন করে তৈরি করতে হবে।

২. সন্ধিযুক্ত গলক্ষতে : গলায় ব্যথা, লাল দেখায়, কর্ণমূল পর্যন্ত ব্যথা, মনে হয় যেন গলায় ঘা হয়েছে, গলার স্বর ভাঙা ভাঙা; এ ক্ষেত্রে একটা পাকা কলা ১ কাপ পানি দিয়ে চটকে গরম করে ছেঁটে নিয়ে সকালে এবং নতুন করে তৈরি করে বিকালে খেতে হবে। মাসখানিক খেলেই উপশম হবে।

৩. কৃমিতে : ১ চা-চামচ কলাগাছের শিকড়ের রস সকালে খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক ৩-৪ চা-চামচ, কিশোর বয়স্কদের ২ চা-চামচ আর শিশুদের ১ চা-চামচ খাওয়াতে হবে।

৪. প্রদর রোগে : ১টা কাঁচাকলা চাকা চাকা করে কেটে রাত্রে ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালিপেটে সেই পানি খেলে মাসখানিকের মধ্যে প্রদর রোগ সেরে যাবে।

৫. ডায়রিয়াতে : কাঁচাকলা দুই তিনটা খোসাসহ দুই-টুকরো করে কেটে অল্প পানিকে সিদ্ধ করে কলার ভর্তা ৪-৫ বার খেলে দাস্ত বা বেশি পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইনও চলবে।

৬. প্রসূতির কাঁচা নাড়ি শুকাতে : প্রসবের পর শরীরকে ঝরঝরে করার জন্য কাঁচা কলা পুড়ে ভর্তা করে ভাত খেতে দিতে হবে।

 

খ. কলাপাতার ব্যবহার

কলাগাছের সবুজ পাতার রস, মোচা, থোড় সবই প্রয়োজনীয়। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠবদ্ধতা, আমাশয়, রক্তদুষ্টি, অম্লগ্যাস, উচ্চরক্তচাপ, লিভারের দোষ হলে কলাপাতার রস উপকারী। ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে কলাপাতার সাহায্যে বহু রোগের চিকিৎসা করা হয়। ফরাসি ডাক্তাররা শোথ, যক্ষ্মা;, আন্ত্রিক, আমাশয় ও অতিসারে কলাপাতার রস খেতে বলেন।

না-কচি, না-শক্ত বিবর্ণ পাতা অর্থাৎ সবুজ পাতা বেটে বা থেঁথলে ছেঁকে সকালের দিকে আধা কাপ খেতে হবে। নুন, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়া চলবে না। কলাপতায় থাকে ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল পেটে গেলে অন্ত্রের ঘা, লিউকোমিয়া, চর্মরোগ হয় না। কলাপাতার সবুজ রস রক্ত পরিষ্কার করে।

শরীরের কোথাও ক্ষত, চর্মরোগ হলে কলাপাতার রস ঘষে লাগালে উপকার হয়। ব্রঙ্কাইটিস, নেফ্রাইটিস, রক্তক্ষরণ, জমা সর্দিতে কলাপাতার রস খুবই কার্যকরী। প্লুরিশি, কাশি, ক্ষয়রোগ ও থুথুর সঙ্গে রক্ত পড়লে সবুজ কলাপাতার রস প্রতিদিন ভোরে আধাকাপ পরিমাণ খেলে ভীষণ উপকার হবে। কচি কলাপাতা বেটে প্রলেপ দিলে কীট দংশন, হুল ফোটা, কাটায় উপকার হবে।

সর্বপ্রকার দাঁতের ব্যথায় ‘প্ল্যান্টাগো’ (যা কলাপতা থেকে তৈরি হয়) হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা সুনামের সঙ্গে ব্যবহার করে আসছেন। প্যান্টাগোর মাদার তুলার দ্বারা দাঁতের গোড়ায় বাহ্যিক ব্যবহারে দাঁত ব্যথা আরোগ্য হয়। দন্তশূল, কর্ণশূল, কাটা, পোড়া, আঘাতাদি, সর্পদংশন, ইরিসিপেলাস ইত্যাদি নানাবিধ রোগে প্যান্টাগো সার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। গলগ-, ফুলে উঠা, জ্বর, শিরপীড়া সারাতে প্যান্টাগো ব্যবহৃত হয়।

কানের ব্যথায় : কলাগাছের মাঝের গোল অর্থাৎ খুলে যায়নি, সেই পাতাকে থেঁতো করতে হবে। রস নিংড়ে নিয়ে একটু গরম করতে হবে। ওই রস ২ ফোঁটা একবার কানে দিলেই বেদনা কমে যাবে। প্রয়োজনে আবার দিতে হবে।

 

সাবধানতা : কাঁচাকলা উপাদেয় ও সুস্বাদু তরকারি হলেও তরকারিতে খেলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং পেটে বায়ু জমতে পারে। মোচা ও থোড়ের তরকারি সবসময় খেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এদের মধ্যে অক্সালিড এসিড বিদ্যমান। পাকা কলা বেলা ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে খাওয়া উচিত। যখন তখন পাকা কলা খেলে ক্ষতি হতে পারে। কলা ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে, গিলে খেতে নেই। পাকাকলা মুখের লালাতেই হজম হয়।

 

সারের নাম                     প্রতি গাছে সারের পরিমাণ

গোবর-আবর্জনা সার         ১৫-২০ কেজি

টিএসপি                           ২৫০-৪০০ গ্রাম

এমপি                              ২৫০-৩০০ গ্রাম

ইউরিয়া                           ৫০০-৬৫০ গ্রাম

 

কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম*

* রীতা হোমিও হল, পালপাড়া (জামে মসজিদের সামনে), বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon